এটা নিছক একটি পরিসংখ্যান নয়। এটা হলো একটি প্রজন্মের আত্মঘাতী যাত্রাপথের প্রতিফলন।
ইন্টারনেট আসক্তি: মিশ্র বাস্তবতা না আতঙ্ক?
আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৮৫.৯ শতাংশ ইন্টারনেটকে দায়ী করেছে তাদের মানসিক সমস্যার জন্য। এদের মধ্যে কেউ বিষণ্ণতায় ভুগছে, কেউ নিঃসঙ্গতায়, আবার কেউ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভার্চুয়াল জগতে বাস করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদের মতে, “আমাদের তরুণদের সময় কাটানোর কোনো স্বাস্থ্যকর মাধ্যম নেই—না আছে খেলার মাঠ, না পারিবারিক বিনোদন। ফলে তারা অবলম্বন করছে ইন্টারনেটকে, যা একসময় রূপ নিচ্ছে আসক্তিতে।”
আসক্তির বীজ: কৌশলে বোনা ডিজিটাল ফাঁদ
শিক্ষার্থীদের হারিয়ে যাওয়া পথ
জরিপ বলছে,
- ৫৯.৬% শিক্ষার্থী মনে করে ইন্টারনেটে সময় নষ্ট পড়াশোনার ক্ষতি করছে।
- ৫২.৬% শিক্ষার্থীর মনোযোগ হারায় পড়াশোনায়।
- ৩৫.৬% শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনে ভোগে।
- ২৩.৬% নিজেদের দুটি জীবনের মধ্যে বিভক্ত মনে করে — একটি বাস্তব, অন্যটি ভার্চুয়াল।
সচেতনতার আলো: ইন্টারনেট লিটারেসি ও পারিবারিক দায়িত্ব
ইন্টারনেট এখন জীবনের অপরিহার্য অংশ। তাই এটা “বন্ধ” করার কথা বললে সেটা বাস্তবতা নয়, বরং পালানোর কৌশল। দরকার হলো "ইন্টারনেট লিটারেসি" — কীভাবে, কতটা, কিসে সময় দেব?
সমাধান কী?
- কাউন্সেলিং: যারা আসক্ত, তাদের জন্য মানসিক সহায়তা ও থেরাপি প্রয়োজন।
- আন্তঃপ্রজন্ম যোগাযোগ: বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা দরকার—ইন্টারনেটের সুবিধা ও ঝুঁকি দুটো নিয়েই।
- নিয়মিত অফলাইন সময়: পরিবারে নিয়ম করে অফস্ক্রিন টাইম রাখা।
- ডিজিটাল ডিটক্স ক্যাম্পেইন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
- বিকল্প বিনোদন: খেলার মাঠ, লাইভ ক্লাব, বুক ক্লাব, মিউজিক স্কুল—যেখানে তরুণরা ভার্চুয়াল না থেকে বাস্তব সংযোগ গড়তে পারে।
শেষ কথা
তাই এখনই সময় প্রযুক্তির গ্যাড়াকল থেকে বেরিয়ে এসে মানবিক, স্বাস্থ্যকর, ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের দিকে ফিরে যাওয়ার।
Post a Comment