আমাদের জীবনের সবচেয়ে সোনালি সময়—শৈশব, কৈশোর, এমনকি যৌবনের বড় একটি অংশ—নিয়ে নিচ্ছে একটিমাত্র নাম: পড়াশোনা। ছোটবেলা থেকে শুরু করে ২৭/২৮ বছর বয়স পর্যন্ত আমরা শুধু একটাই লক্ষ্যে ছুটছি—ডিগ্রি অর্জন। অথচ এই সময়ে আমরা কেবল ডিগ্রি নয়, জীবনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, স্বপ্ন গড়ার সাহস—এসব কিছুই অর্জন করতে পারতাম, যদি শিক্ষা ব্যবস্থাটা একটু সচেতনভাবে সময়মিত হতো।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ হতে হতে ২৭ কিংবা ২৮ বছর লেগে যায়। এরপর শুরু হয় চাকরি পাওয়ার যুদ্ধ, যেখানে বয়সের সীমা ধরা হয় ৩০ থেকে ৩২। ফলে মাত্র ৩ থেকে ৫ বছর সময় হাতে থাকে “স্বপ্নের সরকারি চাকরি” পাওয়ার জন্য। এই সময়ের মধ্যে কেউ চাকরি পায়, কেউ হার মানে। যিনি হেরে যান, তার জীবনের অনেকটাই ক্লান্তিকর হয়—বয়স বেড়ে যায়, আত্মবিশ্বাস কমে যায়, আর স্বপ্নগুলো ঝাপসা হতে থাকে।

এতদিন আমরা শুনে এসেছি—“চাকরির বয়সসীমা বাড়াও”। তবে আমরা কি কখনো ভেবেছি—“পড়াশোনার বয়সসীমা কমানো যায় না?” এই প্রশ্নটাই নতুন এক আলোচনার দরজা খুলতে পারে।

পড়াশোনা শেষ হোক ২২/২৩ বছরেই—এটাই হোক নতুন আন্দোলনের কথা
যদি ২২ বা ২৩ বছর বয়সেই শিক্ষাজীবন শেষ করা যায়, তাহলে একজন তরুণের অন্তত ৭-৮ বছর সময় পাওয়া যাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে, চেষ্টা করতে, ব্যর্থ হলেও আবার উঠে দাঁড়াতে। এটাই কি স্বাভাবিক না? শারীরিকভাবে সবচেয়ে কর্মক্ষম, মানসিকভাবে সবচেয়ে দৃঢ়, আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই সময়টাই তো হওয়া উচিত নিজের ভবিষ্যত গড়ার সেরা সময়।

তাহলে কেন আমরা সময়টা নষ্ট করব বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষা দিয়ে, ক্লাস করে, অনিশ্চয়তায় ভুগে?

সমাধানটা কী হতে পারে?

  • প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যসূচি আধুনিক ও দক্ষতাভিত্তিক করা
  • অপ্রয়োজনীয় সাবজেক্ট ও কোর্স কমিয়ে, বাস্তবমুখী শিক্ষায় জোর দেওয়া
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ৩-৪ বছরের মধ্যেই শেষ করার নিশ্চয়তা তৈরি
  • ইন্টার্নশিপ বা শিল্প সংযুক্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা
  • জীবনদক্ষতা ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সংযুক্ত করা

জীবনের গতি ফিরুক, সময়ের সদ্ব্যবহার হোক
একটা প্রজন্ম যদি ২২/২৩ বছর বয়সেই নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে, তাহলে তারা ২৮/২৯ বছর বয়সে হয়তো চাকরি না পেলে নতুন কিছু করতে পারবে—ব্যবসা, উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণ বা অন্য কোনো কর্মসংস্থান। অন্তত তখনও তাদের হাতে সময় থাকবে, শক্তি থাকবে, সাহস থাকবে। হারিয়ে ফেলবে না জীবনের আশা।

শেষ কথা

আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মসংস্থানের খোঁজে নামে। কিন্তু অনেকে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে, শুধুমাত্র বয়সের ফ্রেমে আটকে পড়ে। তাই সময় এসেছে—চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো নয়, বরং শিক্ষাবয়সের পরিসীমা কমানো নিয়ে ভাববার।

কারণ, সময়ই জীবন। আর সেই সময়কে যদি শৈশবেই শেষ করে ফেলি, তাহলে স্বপ্ন দেখার মতো জীবনের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post