আমরা প্রতিনিয়ত এক প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি—আমরা কারও কাছে যাই কি শুধুই প্রয়োজনে, না কি তারা আমাদের প্রিয়, তাই তাদের খুঁজি?

এই যুগে, যেটাকে কেউ কেউ "ডিজিটাল ডেটাচমেন্ট" আবার কেউ বলেন "ইমোশনাল শর্টকাট"-এর যুগ, সেখানে একটা শব্দ প্রায়শই ধাক্কা দেয়: স্বার্থ। মানুষকে প্রয়োজনের সময় মনে পড়া, আবার কাজ ফুরোলে ভুলে যাওয়া—এটা যেন এক অদৃশ্য সামাজিক চুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জনের খোঁজ — বাস্তবতা না স্বার্থপরতা?

“তুই ফোন করিস না কেন?”
“আরে ব্যস্ত ছিলাম, দরকার ছিল না তাই...”
এই বাক্যটি হয়তো শুনেছেন বা নিজেই বলেছেন অনেকেই।

এখানে প্রশ্ন ওঠে—বন্ধু কি শুধুই দরকারের সময়ের জন্য? প্রিয়জন কি কেবলই প্রয়োজনের গেটওয়ে?

প্রিয়জনের প্রাসঙ্গিকতা প্রয়োজন ছাড়াও

যাকে আমরা প্রিয় বলি, তার সঙ্গে সময় কাটানো, অনুভব ভাগ করে নেওয়া, চুপচাপ বসে থাকলেও মন ভরে যায়—এগুলো কি কোনো প্রয়োজন থেকে হয়? না, হয় এক আত্মিক টান থেকে।

প্রিয় মানুষদের উপস্থিতি অনেক সময় কোনো কাজের জন্য নয়, বরং মন ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন। তাই সেটা প্রয়োজন নয়, বরং মানবিক সম্পর্কের সৌন্দর্য

তবে কি প্রিয়জনদের প্রয়োজনে লাগনো যায় না?

অবশ্যই যায়। প্রিয়জনদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যই হলো, তারা প্রয়োজনের সময় পাশে থাকে—তবে তাদের পাশে থাকা কোন “লেনদেনের হিসাব” নয়, বরং একটা মানবিক দায়বদ্ধতা

দ্বন্দ্বের জায়গা:

সমাজে অনেকেই বলে, "দেখবি, দুঃসময়ে ক'জন খোঁজ নেয়!"—এই কথার মধ্যে যেন একটা হতাশা লুকানো থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই সময় আপনি নিজেও ক'জনের খোঁজ নিয়েছেন?

আমরা সবাই একে অপরের জীবনের আয়না। প্রিয়জনে প্রয়োজন থাকবেই, কিন্তু প্রয়োজনে প্রিয়জন মনে পড়লেই যদি সম্পর্কের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে সেটা সম্পর্ক নয়—তা প্রয়োজননির্ভর যোগাযোগ মাত্র।

আমাদের বেছে নিতে হবে-

  • যদি কাউকে প্রিয় মনে করি, তাহলে শুধু প্রয়োজনেই নয়, অপ্রয়োজনেও তার খোঁজ নেওয়া উচিত।
  • আবার, কারো যদি একমাত্র প্রয়োজনেই খোঁজ পড়ে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সে আমাদের প্রিয় নয়, প্রয়োজনমাত্র।

জীবন খুব দ্রুত পাল্টে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বদলায়, সম্পর্ক বদলায়। তবে কিছু প্রিয়জন যেন থেকে যায় শুধুই প্রিয় বলে—প্রয়োজন ছাড়াও। সেসব সম্পর্কেই জীবন হয়ে উঠে অর্থবহ।

আপনি কাকে শুধু প্রয়োজনে মনে রাখেন, আর কে আপনার প্রিয় বলে মনে থাকে—একবার ভাবুন। আর যদি সম্ভব হয়, আজই কাউকে শুধু খোঁজ নেওয়ার জন্য একটা “অপ্রয়োজনীয়” ফোন করুন। দেখবেন হয়তো সেইটুকু মনোযোগই কাউকে নতুন করে বাঁচার শক্তি দেবে, হয়তো আপনাকে নতুনকরে কারও প্রিয় করে তুলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post