আমি মনে করি একজন মুসলিমের মৃত্যুরশয্যায় তার সাথে কিরূপ আচরণ করতে হয়, মৃত্যুর পরে তাকে কিভাবে রাখতে হয়, কিভাবে গোছল দিতে হয়, কিভাবে কাফন পড়াতে হয়, কিভাবে জানাযা দিতে হয়, কিভাবে কবরে রাখতে হয় এবং কিভাবে মাটি দিতে হয়, এইসকল বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রতিটা মুসলমানের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব।


কেননা, প্রত্যেকটি মানুষ মরণশীল। কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে পারবেনা। একজন মুসলিমের মৃত্যুর পর তার দাফন সম্পন্ন করা পর্যন্ত অন্য মুসলিমের কিছু নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকে । যেগুলো মৃত ব্যক্তির গোছল, কাফন, জানাযা, কবর ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়।

আজ আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য বই এর বর্ণনার আলোকে সহীহ দলিলসহ বিস্তারিত ও বিশদ আলোচনা করার চেষ্টা করবো (ইন শা আল্লাহ) 


আমার আলোচনার প্রধান বিষয়গুলো যা হবে-

১. একজন মুসলিমের মৃত্যুশয্যায় তার শিয়রে বসে আমাদের করণীয়
২. একজন মুসলিমের মৃত্যুর পর ও গোছল দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তার জন্য আমাদের করণীয়
৩. মাইয়্যেতকে গোছল দেওয়ার পদ্ধতিসমূহ
৪. মাইয়্যেতের কাফন (নারী ও পুরুষ)

৫. জানাযা সম্পর্কে ধারণা
৬. জানাযা নামাজের ফযীলত
৭. জানাযা নামাজের শর্তসমূহ
৮. জানাযার ইমামতি
৯. জানাযা ও অন্যান্য নামাযের মধ্যে পার্থক্য
১০. জানাযা নামাজের স্থান ও কাতার
১১. জানাযা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
১২. লাশ বহনের তরীকা এবং সবশেষে
১৩. কবর




১. একজন মুসলিমের মৃত্যুশয্যায় তার শিয়রে বসে আমাদের করণীয়:
প্রত্যেক মানুষ মরণশীল। কেউই চিরদিন বেঁচে থাকতে পারবে না। কোন মানুষের মৃত্যু যখন নিকটবর্তী হয়ে যায়, তখন অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কি করতে হবে, সে বুঝ-বিবেচনা তার থাকে না; তাই তখন তার শিয়রে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের অনেক করনীয়/কাজ থাকে।

তার মধ্যে প্রথম কাজ হচ্ছে, মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির মৃত্যু যখন খুবই নিকটবর্তী মনে হবে, তখন তাকে ডানকাতে কিবলামুখী করে শােয়াবে এবং এটা সুন্নত। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তবে চিৎ করে পা কিবলার দিকে দিয়ে শােয়াবে এবং কাছে বসে উচ্চস্বরে কালিমায়ে শাহাদত পড়তে থাকবে, তবে তাকে পড়তে নির্দেশ দিবে না কারণ নির্দেশ দিলে মৃত্যুর যন্ত্রণায় মুখ থেকে অন্য শব্দ বের হতে পারে। কালিমা বেশী উচ্চস্বরে পড়বে না। আর যদি মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তি একবার কালিমা পড়ে, তবে আর পড়ার প্রয়ােজন নেই যদি সে দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলে। দুনিয়াবী কথাবার্তা বললে আবার জোরে জোরে কালিমা পড়তে থাকবে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে বসে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলে তাকে দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট করবে না; বরং আখিরাত বিষয়ক কথাবার্তা বলবে এবং সেটাই তার জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। কালিমা পাঠের পর অন্য কোন কথাবার্তা না বলাই কালিমার উপর মৃত্যু হওয়া, আর এমন ব্যক্তিরই ‘খাতিমা বিল খাইর’ নসীব হয় । এ ব্যাপারে রাসূলে মাকবূল (সা.) বলেছেন-


من كان أخر كلامه لا إله الا الله دخل الجنة-
অর্থাৎ- যার শেষ বাক্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু হবে, সে জান্নাতে যাবে। -আবূ দাউদ


মৃত্যুর সময় অনেকের খুবই কষ্ট হয়। এ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার মানসে রাসূলে মাকবূল (সা.) ইরশাদ করেছেন-

অর্থাৎ- তোমাদের মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তির কাছে বসে সূরা ইয়াসীন পাঠ করাে (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, আহমদ)। তাতে মৃত্যু যন্ত্রণা কম হয় ও আসানীর সাথে মৃত্যু হয়। এছাড়াও, মৃত্যুর সময় মুখে পানি দিতে হয়।




২. একজন মুসলিমের মৃত্যুর পর ও গোছল দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তার জন্য আমাদের করণীয়:
মৃত্যুশয্যায় থাকা মুসলিমের মৃত্যু হয়ে গেলে তার হাত, পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সােজা করে দিবে। চোখ ও মুখ বন্ধ করে দিবে এবং তখন-

بسم الله و على ملة رسول الله-
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ -এ দু'আ পড়বে।

মুখ খােলা হা করে থাকার সম্ভাবনা থাকলে এক টুকরাে কাপড় দিয়ে চোয়াল বেঁধে দিবে। চোখ দু'টিও টেনে বুজিয়ে দিবে আর দু’পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি একত্র করে বেঁধে দিবে, যাতে ফাক না হয়ে যায়। তারপর একখানি চাদর দিয়ে ঢেকে রাখবে এবং গােসল ও দাফন কাফন যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি করবে।

মৃত ব্যক্তির নিকট হায়েয নিফাস বিশিষ্টা মহিলা এবং যার উপর গােসল ফরয হয়েছে এ ধরনের কেউ থাকবে না।

মৃত ব্যক্তিকে গােসল করানাের পূর্বে তার কাছে বসে কুরআন পাঠ করা জায়েয নেই। -আলমগিরী

মৃত ব্যক্তি ও কাফন দাফনের কাপড়ে লুবান ও আগরবাতি দিয়ে সুগন্ধি দিতে হয় । তারপর খাটের চারদিকে আগরবাতি ও লুবান দিয়ে ৩/৫ বার অনুরূপভাবে সুগন্ধি দিয়ে খাটে বা তক্তায় করে উঁচু স্থানে রাখতে হবে।




৩. মাইয়্যেতকে গোছল দেওয়ার পদ্ধতিসমূহ:
মৃত ব্যক্তিকে গােসল করানাে ওয়াজিব। গােসলের পূর্বেই গােসলের স্থানের চারদিকে পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্যদের নজরে না পড়ে। তারপর একটি খাট বা তক্তার চারদিকে ৩/৫/৭ বার আগরবাতি বা লুবান দিয়ে ধোয়া দিবে। মৃতদেহকে কোন তক্তা বা খাটের উপর উত্তর শিয়রে কিবলামুখী করে রাখতে হবে এবং নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রেখে শরীরের বাকী সব কাপড় খুলে ফেলবে কিন্তু মাইয়্যেত মহিলা হলে সর্বশরীর ঢেকে রাখবে।

পুরুষের গােসল পুরুষ দিবে এবং স্ত্রীলােকের গােসল স্ত্রীলােক দিবে। তবে স্ত্রী ইচ্ছা করলে মৃত স্বামীকে দেখতে, স্পর্শ করতে ও গােসল করাতে পারবে কিন্তু স্বামী তার স্ত্রীকে শুধু দেখতে পারবে, স্পর্শ ও গােসল করাতে পারবে না। -দুররুল মুখতার

পুরুষকে পুরুষই গােসল দিবে। মহিলারা দিবে না। এমনকি কোথাও যদি কোন পুরুষ মারা যায়, আর সেখানে অন্য মহিলা ছাড়া কেউই না থাকে, তখনও সে মহিলা গােসল করাতে পারবে না; বরং স্ত্রী থাকলে সে গােসল দিবে নতুবা অন্য মহিলা হাতে মােজ লাগিয়ে তায়াম্মুম করাবে।

নাবালেগ ছেলে মেয়ে হলে স্ত্রী পুরুষ যে কেউ গােসল করাতে পারবে। কোন সন্তান জীবিত জন্মগ্রহণ করে মারা গেলে তার নাম রাখতে হবে এবং দাফন-কাফন ও জানাযা পড়তে হবে। বাচ্চা যদি মৃত অবস্থায় জন্মে, তবে তার কিছুই দরকার নেই। শুধু একখণ্ড কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করবে (কুদুরী)। উল্লেখ্য যে, শহীদদের গােসল দানের প্রয়ােজন হয় না।



*মাইয়্যেতকে গােসল দেয়ার সুন্নত তরীকা:
মাইয়্যেতের নিকটতম আত্মীয়ই গােসল দেয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি। গােসলদানকারী গােসল দেয়ার পূর্বেই হাতে পাক-পবিত্র নেকড়া পেঁচিয়ে প্রথমে ঢিলা ও পরে পানি দিয়ে মাইয়্যেতকে ইসতিনজা করাবে (পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা পরিস্কার করবে)। তারপর ওযু করাবে কিন্তু কুলী করাবে না এবং নাকেও পানি দিবে না। গােসলের পূর্বে নাক ও কানের ছিদ্র তুলা বা কাপড়ের ভিজা টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিবে, যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে। ওযূ শেষে নেকড়া দিয়ে নাকের ছিদ্র ও দাঁতের মাড়ি তিনবার মুছে দিবে। উল্লেখ্য যে, মাইয়্যেত যদি জুনুবী অবস্থায় (গােসল ফরয হওয়া অবস্থায়) মারা যায় তবে এভাবে মুছে দেয়া ওয়াজিব। মাথার চুল ও দাড়ি খাতমী ফুল, সাবান বা খার (সােডা) জাতীয় কোন বস্তু দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে দিবে। তারপর মাইয়্যেতকে বামকাতে শুইয়ে বরই পাতা দিয়ে গরম করা পানি ৩-৫ বার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেলে ধুয়ে ফেলবে যেন পানি মাইয়্যেতের নীচে পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। তারপর অনুরূপভাবে ডানকাতে শুইয়ে ৩-৫ বার পানি ঢেলে ধুয়ে দিবে, যাতে পিঠের তলদেশ যা খাটের বা তক্তার সাথে আছে, তা ভিজে যায়। বরই পাতা ও ওশনান পাতা না পাওয়া গেলে পরিস্কার পানি দিয়ে গােসল করাবে। গােসল করানাে শেষ হলে গােসলদানকারী মাইয়্যেতকে নিজের দিকে একটু টেক লাগিয়ে বসাবে এবং তাঁর পেটটা আস্তে আস্তে উপর থেকে নীচের দিকে মালিশ করবে, যাতে পেটের ভিতরে নাপাকী থাকলে তা বের হয়ে যায়। পেট থেকে মলদ্বারে বা লিঙ্গের অগ্রভাগে কোন নাপাকী দেখা গেলে শুধু কুলুখ করিয়ে নাপাকীটুকু ধুয়ে ফেলবে। এমতাবস্থায় মাইয়্যেতকে পুনরায় উযূ বা গােসল করাতে হবে না।

তারপর সম্ভব হলে মাইয়্যেতকে বামকাতে শুইয়ে কপূরের পানি মাথা থেকে পা পর্যন্ত তিনবার ঢালবে। তারপর শুকনাে কাপড় দিয়ে সারা শরীর ভাল করে মুছে ফেলবে। তারপর মাইয়্যেতের কাফনের উপর রাখার সময় স্ত্রীলােকের মাথায়, পুরুষের মাথায় ও দাড়িতে আতর এবং সিজদার স্থানসমূহে অর্থাৎ কপাল, নাক, হাতের তালু, দু’পা ও হাঁটুতে কপুর লাগাবে । কিন্তু মাইয়্যেতের চুল আঁচড়ানাে বা বর্ধিত নখ কাটা যাবে না। গােসল শেষে কাফন পরাবে। কাফনের উপর অঙ্গুলী দিয়ে দু'আ লেখা যাবে কিন্তু কালি দিয়ে লেখা যাবে না। উল্লেখ্য যে, মাইয়্যেতকে যে গােসল করাবে, তার জন্য গােসল দেয়ার পূর্বে উযূ ও পরে গােসল করা মুস্তাহাব। গােসল করিয়ে মজুরী নেয়া নাজায়েয। মাইয়্যেতকে গােসল করালে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।





৪. মাইয়্যেতের কাফন (নারী ও পুরুষ):
পুরুষের জন্য তিনটি ও মহিলাদের জন্য ৫ টি কাপড় দেয়া সুন্নত। প্রয়োজনে একটি কাপড় দিয়েও কাফন দেয়া চলে। কাফনের কাপড় সাদা হওয়াই উত্তম। ব্যতিক্রম হিসেবে অন্য রঙ্গেরও ব্যবহার করা যায়। কাফনে মূল্যবান কাপড় ব্যবহার না করাই উত্তম। এ ব্যাপারে হযরত আবু বকর (রা.) -এর বাণী স্মরণীয়- “নতুন কাপড় মৃত ব্যক্তিদের চেয়ে জীবিত ব্যক্তিদের প্রয়ােজন বেশি।”

পুরুষের কাফনের কাপড় নিম্নরূপঃ
১. ইজার
২. কামিস ও
৩. লেফাফা বা চাদর।

মহিলাদের কাফনের কাপড় নিম্নরূপঃ
১. কামিস বা কোর্তা
২. ইজার
৩. চাদর বা লেফাফা
৪. সিরবন্দ (ওড়না) ও
৫. সীনাবন্দ।

ব্যাখ্যা:
১. ইজার: মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা, যা লেফাফার উপর বিছিয়ে দেয়া হয়, তবে লেফাফা হতে সামান্য খাট হবে।
২. কামিস বা কোর্তা: কাঁধ হতে পা পর্যন্ত লম্বা হবে তাতে আস্তিন ও কল্লি থাকবে না।
৩. লেফাফা বা চাদর: শরীরের মাপ থেকে এক হাত বড় হতে হবে, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত কাপড়ের নিচে বিছিয়ে দেয়া যায়। এটা ইজার হতে সামান্য লম্বা হবে। এ চাদর দিয়ে সর্বশেষে সমস্ত শরীর জড়ানাে হয়। কোন কোন আলিম পাগড়ির কথা বলেছেন, তবে পাগড়ি না দেয়াই ভাল।
৪. সিরবন্দ: মাথা ঢাকার কাপড়- যা ১২ গিরা প্রশস্ত ও তিন হাত দীর্ঘ হবে।
৫. সীনাবন্দ: দেড় গজ দীর্ঘ ও বগল থেকে নাভী পর্যন্ত প্রশস্ত হবে। তবে হাঁটু পর্যন্ত হওয়া ভাল (সীনাবন্দ দিয়ে মহিলাদের বুক বেঁধে দেয়া হয়)। এখানে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের একটি নমুনা পেশ করা হলাে, তবে শরীরের চাহিদা মুতাবিক কাফনের কাপড় কমবেশি করতে হবে।

কাফনের কাপড়ের অভাব হলে পুরুষের জন্য দু'টি- ইজার ও লেফাফা, মহিলাদের জন্য তিনটি- ইজার, লেফাফা ও সিরবন্দ দিয়ে কাফন করা যাবে। যদি তাও না পাওয়া যায়, তবে যতটুকু পাওয়া যায়, তা দিয়ে কাফন করাবে।

উল্লেখ্য যে, ওজর ছাড়া পুরুষদেরকে এক কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া মাকরূহ (হিদায়া)। স্বাভাবিকভাবেই মাইয়্যেতের আত্মীয়-স্বজন কাফনের কাপড় সংগ্রহ করবে। তবে যদি তারা সংগ্রহে অক্ষম হয় তখন সেখানে জনসাধারণের উপর কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা ফরয। যদি তারাও অক্ষম হয়, তবে স্থানীয় সক্ষম ব্যক্তিদের নিকট হতে কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। -মিফতাহুল জান্নাহ।

পুরুষের কাফন পরাবার পদ্ধতি:
প্রথমে লেফাফা, তার উপর ইজার, তারপর কোর্তার পিঠের অংশ বিছাবে এবং বাকী অংশ মাথার কাছে গুছিয়ে রাখবে, যেন লাশের মাথার উপর দিয়ে টেনে এনে সমস্ত শরীর ঢাকা যায়। তারপর কাফনে ৩/৫ বেজোড় আগরবাতি ও লুবানের ধুয়া দিয়ে ধূমায়িত করবে। তারপর মাইয়্যেতকে শুইয়ে মাথা প্রবেশ করিয়ে উপরের অংশ হাঁটুর দিকে টেনে দিয়ে মাইয়্যেতের শরীর কাপড়ে জড়িয়ে ফেলবে। তারপর প্রথমে বামদিক হতে ইজার সীনার উপর উঠিয়ে পরে ডানদিকের ইজার দিয়ে ঢেকে দিবে। তারপর উপরােক্ত নিয়মে চাদর দিয়ে ঢেকে দিবে। সর্বশেষ সূতা দিয়ে মধ্যখানে, পায়ের দিক ও মাথার দিক বেঁধে দিবে যাতে খুলে না যায়। অবশ্য কবরে নামিয়ে উক্ত বাধন খুলে দিতে হবে।

মহিলাদের কাফন পরাবার পদ্ধতি:
প্রথমে চাদর, তারপর ইজার, তারপর সিনাবন্দ বিছাবে। পরে কোর্তার নিচের অংশ বিছিয়ে উপরের অংশ মাথার কাছে গুছিয়ে রাখবে। মাইয়্যেতকে কাফনের উপর শোয়াবে এবং কোর্তার সামনের অংশ মাথা দিয়ে গলায় প্রবেশ করিয়ে পরিয়ে দিবে। মাথার চুল দু'ভাগ করে দু'পাশ দিয়ে এনে কোর্তার উপর বক্ষের উপর রেখে তারপর সিরবন্দ দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে মুখ খােলা রেখে চুলের উপর রেখে দিবে। পরে সিনাবন্দ দু'পাশ থেকে বামপাশ প্রথমে উঠিয়ে ডানপাশ দিয়ে পেঁচিয়ে দিবে এবং ইজারের বামপাশে উঠিয়ে ডানপাশ দিয়ে পেঁচিয়ে দিবে। পরে একই নিয়মে চাদর পেঁচাবে। তারপর মধ্যখান, পায়ের দিক ও মাথার দিক সূতা বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে দিবে, যাতে খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। কবরে নামানাের পর উক্ত বাঁধন খুলে দিতে হবে।





৫. জানাযা সম্পর্কে ধারণা:
জানাযা আরবী শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ-
১. আবৃত করা বা লুকানো
২. লাশ বা মৃতদেহ

তবে সার্বিকভাবে জানাযা বলতে মৃতদেহ এবং তার জন্য নামায আদায় করা বােঝায়।

জানাযার নামায ফরযে কিফায়া। কিছু সংখ্যক লােক আদায় করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। আর যদি কেউই আদায় না করে, তবে যারা মৃত্যু সংবাদ পেয়েছে, তারা সকলেই গুনাহগার হবে। কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে অন্যান্য মুসলমানদের উপর তার জন্য জানাযা পড়া কর্তব্য। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী নিম্নরূপ:

অর্থাৎ- আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে। ১. সালামের উত্তর দেয়া, ২. রুগ্ন ব্যক্তির সেবা শুশ্রুষা করা, ৩. জানাযার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। -বুখারী

জানাযা নামাযে প্রধানত মৃত ব্যক্তির জন্য দু'আ করা হয়, এ নামাযে রুকু-সিজদা ও তাশাহহুদ নেই।


৬. জানাযা নামাজের ফযীলত:
মৃত ব্যক্তির জানাযায় হাযির হওয়া তার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবােধের বহিঃপ্রকাশ। জানাযার নামাযে উপস্থিত হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসটি প্রণিধানযােগ্যঃ

অর্থাৎ- রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হয়ে নামায পড়বে, সে এক কীরাত পরিমাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি দাফন পর্যন্ত থাকবে, সে দু'কীরাত পাবে। জিজ্ঞেস করা হল, “কীরাত কি? বললেন, দু'টি বৃহৎ পর্বত সমতুল্য (এখানে দু'টি বৃহৎ পর্বত সমতুল্য বলে অধিক সওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)।




৭. জানাযা নামাজের শর্তসমূহ:
জানাযা নামায শুরু হওয়ার জন্য মুসল্লীর অন্যান্য নামাযের ন্যায় শর্তগুলাে পালন করা অবশ্য করণীয়।
যেমন: শরীর পাক থাকা, কাপড় পাক থাকা ইত্যাদি।

এছাড়াও মাইয়্যেতের সাথে সম্পর্কিত কতগুলাে শর্ত রয়েছে যা পালন না করলে জানাযা সহীহ হবে না। সে শর্তগুলাে হলাে নিম্নরূপঃ
১. মাইয়্যেত মুসলমান হওয়া, অমুসলমানের জানাযা পড়া জায়েয নেই।
২. মাইয়্যেতের শরীর ও কাপড় পবিত্র হওয়া। মাইয়্যেতকে যে স্থানে রাখবে, সে স্থান পবিত্র হওয়া।
৩. সতর ঢাকা (কাফন পরিহিত হতে হবে)।
৪. মাইয়্যেত খাটে বা মাটিতে থাকা। কারণ গাড়িতে অথবা মানুষের কাধে থাকলে জানাযা সহীহ হবে না।
৫. মাইয়্যেত সামনে থাকা (অনুপস্থিত থাকলে জানাযা সহীহ হবে না)।




৮. জানাযার ইমামতি:
জানাযা নামাযের ইমাম হওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছেন বাদশাহ। তারপরে মৃত ব্যক্তির ওলীর (অভিবাবকদের) মর্যাদা। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যে যত নিকটবর্তী, সে ইমামতি করার জন্য অধিকতর যােগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে ওলীর ইজাযতে যে কোন ব্যক্তি ইমামতি করতে পারবে। ওলী ছাড়া অন্য কেউ জানাযা পড়ালে তার জন্য দ্বিতীয়বার নামায পড়ার ইজাযত আছে। কেননা ওলী সবচেয়ে বেশী হকদার আর ওলী জানাযা পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়া যাবে না। আর জানাযা না পড়ে মাইয়্যেতকে কবরস্থ করা হলে তিনদিন পর্যন্ত কবরের উপর জানাযা পড়া যাবে। তিনদিনের পর জানাযা পড়া যাবে না। -কুদূরী





৯. জানাযা ও অন্যান্য নামাযের মধ্যে পার্থক্য:
জানাযার নামায ও অন্যান্য নামাযের মাসয়ালার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন: জানাযার নামায না পাওয়ার আশংকা থাকলে ওলী ও বাদশাহ ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে পানি থাকা সত্ত্বেও তাড়াতাড়ির জন্য তায়াম্মুম করে জানাযায় শরীক হওয়া যায়েয। -মিফতাহুল জান্নাত




১০. জানাযা নামাজের স্থান ও কাতার:
সাধারণত এ নামায মসজিদের আঙ্গিনায়ই আদায় করা হয়। তবে জামাআত হয় এমন মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য ওজরে মসজিদে পড়া যাবে। যেমন: ঝড় বা বৃষ্টির দরুন মাঠে নামায পড়া সম্ভব না হলে। এ ক্ষেত্রে মাইয়্যেতকে মসজিদের বাইরে রাখতে হবে।

জানাযা নামাযের জন্য তিন কাতার হওয়া সুন্নত। এমন কি নামাযে যদি শুধু সাতজনও অংশ গ্রহণ করে, তবুও একজন ইমাম, বাকী ছয় জনের তিনজন প্রথম কাতারে দাঁড়াবে, দু’জন দ্বিতীয় কাতারে ও একজন তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে। -বেহেস্তী জেওর

লােক বেশি হলে কাতার বেশি হবে কিন্তু কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। নামায বিনা ওজরে বসে বসে পড়া যাবে না, বরং তা দাঁড়িয়েইপড়তে হবে।




১১. জানাযা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি:
ইমাম সাহেব মাইয়্যেতকে কিবলামুখী করে সামনে রেখে তার সীনা বরাবর দাঁড়াবেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরাও বেজোড় কাতারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। তারপর নিয়্যত করবে অর্থাৎ মনে মনে এ সংকল্প করবে যে, আমার সামনে রাখা মাইয়্যেতের জানাযার নামায আদায় করছি। উল্লেখ্য যে, নিয়্যত আরবীত , বাংলায় বা অন্য যে কোন ভাষায় হতে পারে; আরবীতে হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

নিয়তের বাংলা উচ্চারন: "নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।"

এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।


নিয়্যত করে ইমাম উচ্চস্বরে ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা আস্তে আস্তে আল্লাহু আকবার বলে যথানিয়মে হাত বাঁধবে, এরপর নিম্নলিখিত দু’আ পাঠ করবে-

سبحانك اللهم وبحمدك و تبارك اسمك و تعالی جك و جل ثنائك ولا اله غيرك -
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।

তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় তাকবীর বলবে এবং নামাযে যে দরূদ পড়া হয়, তা পড়বে। তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় তাকবীর বলবে। তৃতীয় তাকবীর বলে মাইয়্যেত পুরুষ বা মহিলা বালিগা হলে নিমােক্ত দু’আ পড়বে-

لَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا ارْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ:

"আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।"


মাইয়্যেত নাবালেগা মেয়ে হলে পড়বে-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة

উচ্চারন:

"আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।"



মাইয়্যেত নাবালেগ ছেলে হলে পড়বে-

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا

উচ্চারন:

"আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।"


উপরিউক্তি দু’আ শেষে হাত না উঠিয়ে চতুর্থ তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলবে। তারপর–
السلام عليكم و رحمة الله

বলে প্রথমে ডানে এবং পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম তাকবীর ছাড়া বাকী কোন তাকবীরে হাত উঠাবে না।





১২. লাশ বহনের তরীকা:
মাইয়্যেতকে চারজন পুরুষ লােকে বহন করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া সুন্নত। তবে মাইয়্যেত ছােট হলে কম লােকে বহন করলেও চলবে। লাশ বহনের সময় দৌড়াবে না; বরং স্বাভাবিক গতিতে চলবে, যাতে লাশ পড়ে না যায়। লাশের সামনে না চলে পিছনে চলা মুস্তাহাব। লাশ কবরস্থানে পৌছার পূর্বে মাটিতে বসা মাকরূহ। রাসূল (সা.) মাইয়্যেত কবরস্থানে পৌছার পূর্বে মাটিতে বসতে নিষেধ করেছেন।





১৩. কবর:
কবর দু'ধরনের হতে পারে, বগলী কবর ও সিন্দুক কবর। প্রথমে সােজাসুজি উত্তর-দক্ষিণে মাইয়্যেতের পরিমাপের কিছু বেশি লম্বা আর পাশে তার অর্ধেক এবং আড়াই হাত-তিন হাত পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি কবর খনন করতে হবে (কারাে কারাে মতে পুরুষের জন্য নাভী পরিমাণ এবং স্ত্রী লােকের জন্য বুক পরিমাণ গভীর করতে হবে)।

তারপর কবরের পশ্চিমদিকের দেয়ালের ভিতরে নীচে ছােট একটি গর্ত করবে (মাইয়্যেত রাখার জন্য) এ পদ্ধতিকে বগলী কবর বলে। আর কবরের মাঝখানে মাইয়্যেত রাখার জন্য যে ছোট গর্ত করা হয় তাকে সিন্দুক কবর বলে।

মাটি নরম না থাকলে বগলী কবর দেয়া উত্তম।

মাইয়্যেতকে কবরের পশ্চিম পাশে রেখে তিন-চারজন লােক কবরে নামতে হবে। স্ত্রীলােকগণের বেলায় পর্দা রক্ষা করে নামাতে হবে। তাদেরকে মুহরিম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয়) পুরুষরা ধরে নামাবে, তা না থাকলে বৃদ্ধ পরহেযগার আর তা না থাকলে যুবক পরহেযগার লােক নামাবে, মাইয়্যেতকে কবরে নামিয়ে কিবলামুখী করে শুইয়ে কাফনের বাঁধন থাকলে তা খুলে দিবে। কবরে শােয়ানাের সময় এ দু'আ পাঠ করবে-

بسم الله و على ملة رسول الله-

কবরে শােয়ানাের পর বাঁশের চালি বিছিয়ে মাটি দেয়া শুরু করবে, মাটি দেয়ার সময় এ দু'আ পাঠ করবে-

منها خلقنكم وفيها نعيدكم و منها نخرجكم تارة أخرى-


তবে কোন কোন কিতাবে এ দু’আকে তিন ভাগ করে তিন মুষ্টি মাটি দেয়ার সময় পাঠ করার কথা উল্লেখ আছে।

প্রথমে মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
منها خلقنكم

দ্বিতীয় মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
وفيها نعيدكم

এবং তৃতীয় মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
و منها نخرجكم تارة أخرى

অতঃপর ভাল করে মাটি বিছিয়ে দেবে। কবরের মধ্যেখানে উটের পিঠের মত অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু করে দিবে। উল্লেখ্য যে, কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া ও কোন কাঁচা গাছের ডাল পুঁতে দেয়া মুস্তাহাব।

মাইয়্যেতকে কবরে রেখে একটু দেরী করে তার জন্য দু'আ করা মুস্তাহাব। রাসূল (সা.) এ ব্যাপারে বলেছেন-


অর্থাৎ- “তােমাদের মৃত ব্যক্তিদিগকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে তালকীন দিবে” -মুসলিম।

মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম, দু'আ-দরূদের অনুষ্ঠান করা অবশ্যই জীবিতদের পবিত্র দায়িত্ব। তবে তা যে তিনদিনের দিন অথবা চল্লিশ দিনের দিন হতে হবে এ ধরনের কোন হুকুম মেনে না করেন। কেননা, এ ধরনের কোন হুকুম শরীয়তে নেই। এ অনুষ্ঠান যে কোন সময় করা যেতে পারে। গরীব-মিসকীনদের খানা খাওয়ালে অবশ্যই মৃত ব্যক্তি সওয়াব পাবে, তাই যাদের সঙ্গতি (সামর্থ) আছে তাদের এ ধরনের ব্যবস্থা করা উচিত।


তথ্যসূত্র:
১. ইসলামিয়াত - চতুর্থ সংস্করণ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)
২. আল আকায়েদ ওয়াল ফিকহ্ - নবম/দশম শ্রেণি (বোর্ড বই)
৩. নির্ভরযোগ্য ইসলামিক বই সমূহ

2 Comments

  1. মাশাআল্লাহ।
    খুব ভালো লাগলো।
    তথ্যবহুল লেখনী।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post