২. কামিস বা কোর্তা: কাঁধ হতে পা পর্যন্ত লম্বা হবে তাতে আস্তিন ও কল্লি থাকবে না।
৩. লেফাফা বা চাদর: শরীরের মাপ থেকে এক হাত বড় হতে হবে, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত কাপড়ের নিচে বিছিয়ে দেয়া যায়। এটা ইজার হতে সামান্য লম্বা হবে। এ চাদর দিয়ে সর্বশেষে সমস্ত শরীর জড়ানাে হয়। কোন কোন আলিম পাগড়ির কথা বলেছেন, তবে পাগড়ি না দেয়াই ভাল।
৪. সিরবন্দ: মাথা ঢাকার কাপড়- যা ১২ গিরা প্রশস্ত ও তিন হাত দীর্ঘ হবে।
৫. সীনাবন্দ: দেড় গজ দীর্ঘ ও বগল থেকে নাভী পর্যন্ত প্রশস্ত হবে। তবে হাঁটু পর্যন্ত হওয়া ভাল (সীনাবন্দ দিয়ে মহিলাদের বুক বেঁধে দেয়া হয়)। এখানে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের একটি নমুনা পেশ করা হলাে, তবে শরীরের চাহিদা মুতাবিক কাফনের কাপড় কমবেশি করতে হবে।
কাফনের কাপড়ের অভাব হলে পুরুষের জন্য দু'টি- ইজার ও লেফাফা, মহিলাদের জন্য তিনটি- ইজার, লেফাফা ও সিরবন্দ দিয়ে কাফন করা যাবে। যদি তাও না পাওয়া যায়, তবে যতটুকু পাওয়া যায়, তা দিয়ে কাফন করাবে।
উল্লেখ্য যে, ওজর ছাড়া পুরুষদেরকে এক কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া মাকরূহ (হিদায়া)। স্বাভাবিকভাবেই মাইয়্যেতের আত্মীয়-স্বজন কাফনের কাপড় সংগ্রহ করবে। তবে যদি তারা সংগ্রহে অক্ষম হয় তখন সেখানে জনসাধারণের উপর কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা ফরয। যদি তারাও অক্ষম হয়, তবে স্থানীয় সক্ষম ব্যক্তিদের নিকট হতে কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। -মিফতাহুল জান্নাহ।
পুরুষের কাফন পরাবার পদ্ধতি:
প্রথমে লেফাফা, তার উপর ইজার, তারপর কোর্তার পিঠের অংশ বিছাবে এবং বাকী অংশ মাথার কাছে গুছিয়ে রাখবে, যেন লাশের মাথার উপর দিয়ে টেনে এনে সমস্ত শরীর ঢাকা যায়। তারপর কাফনে ৩/৫ বেজোড় আগরবাতি ও লুবানের ধুয়া দিয়ে ধূমায়িত করবে। তারপর মাইয়্যেতকে শুইয়ে মাথা প্রবেশ করিয়ে উপরের অংশ হাঁটুর দিকে টেনে দিয়ে মাইয়্যেতের শরীর কাপড়ে জড়িয়ে ফেলবে। তারপর প্রথমে বামদিক হতে ইজার সীনার উপর উঠিয়ে পরে ডানদিকের ইজার দিয়ে ঢেকে দিবে। তারপর উপরােক্ত নিয়মে চাদর দিয়ে ঢেকে দিবে। সর্বশেষ সূতা দিয়ে মধ্যখানে, পায়ের দিক ও মাথার দিক বেঁধে দিবে যাতে খুলে না যায়। অবশ্য কবরে নামিয়ে উক্ত বাধন খুলে দিতে হবে।
মহিলাদের কাফন পরাবার পদ্ধতি:
প্রথমে চাদর, তারপর ইজার, তারপর সিনাবন্দ বিছাবে। পরে কোর্তার নিচের অংশ বিছিয়ে উপরের অংশ মাথার কাছে গুছিয়ে রাখবে। মাইয়্যেতকে কাফনের উপর শোয়াবে এবং কোর্তার সামনের অংশ মাথা দিয়ে গলায় প্রবেশ করিয়ে পরিয়ে দিবে। মাথার চুল দু'ভাগ করে দু'পাশ দিয়ে এনে কোর্তার উপর বক্ষের উপর রেখে তারপর সিরবন্দ দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে মুখ খােলা রেখে চুলের উপর রেখে দিবে। পরে সিনাবন্দ দু'পাশ থেকে বামপাশ প্রথমে উঠিয়ে ডানপাশ দিয়ে পেঁচিয়ে দিবে এবং ইজারের বামপাশে উঠিয়ে ডানপাশ দিয়ে পেঁচিয়ে দিবে। পরে একই নিয়মে চাদর পেঁচাবে। তারপর মধ্যখান, পায়ের দিক ও মাথার দিক সূতা বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে দিবে, যাতে খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। কবরে নামানাের পর উক্ত বাঁধন খুলে দিতে হবে।
৫. জানাযা সম্পর্কে ধারণা:
জানাযা আরবী শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ-
১. আবৃত করা বা লুকানো
২. লাশ বা মৃতদেহ
তবে সার্বিকভাবে জানাযা বলতে মৃতদেহ এবং তার জন্য নামায আদায় করা বােঝায়।
জানাযার নামায ফরযে কিফায়া। কিছু সংখ্যক লােক আদায় করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। আর যদি কেউই আদায় না করে, তবে যারা মৃত্যু সংবাদ পেয়েছে, তারা সকলেই গুনাহগার হবে। কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে অন্যান্য মুসলমানদের উপর তার জন্য জানাযা পড়া কর্তব্য। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী নিম্নরূপ:
অর্থাৎ- আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে। ১. সালামের উত্তর দেয়া, ২. রুগ্ন ব্যক্তির সেবা শুশ্রুষা করা, ৩. জানাযার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। -বুখারী
জানাযা নামাযে প্রধানত মৃত ব্যক্তির জন্য দু'আ করা হয়, এ নামাযে রুকু-সিজদা ও তাশাহহুদ নেই।
৬. জানাযা নামাজের ফযীলত:
মৃত ব্যক্তির জানাযায় হাযির হওয়া তার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবােধের বহিঃপ্রকাশ। জানাযার নামাযে উপস্থিত হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসটি প্রণিধানযােগ্যঃ
অর্থাৎ- রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হয়ে নামায পড়বে, সে এক কীরাত পরিমাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি দাফন পর্যন্ত থাকবে, সে দু'কীরাত পাবে। জিজ্ঞেস করা হল, “কীরাত কি? বললেন, দু'টি বৃহৎ পর্বত সমতুল্য (এখানে দু'টি বৃহৎ পর্বত সমতুল্য বলে অধিক সওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)।
৭. জানাযা নামাজের শর্তসমূহ:
জানাযা নামায শুরু হওয়ার জন্য মুসল্লীর অন্যান্য নামাযের ন্যায় শর্তগুলাে পালন করা অবশ্য করণীয়।
যেমন: শরীর পাক থাকা, কাপড় পাক থাকা ইত্যাদি।
এছাড়াও মাইয়্যেতের সাথে সম্পর্কিত কতগুলাে শর্ত রয়েছে যা পালন না করলে জানাযা সহীহ হবে না। সে শর্তগুলাে হলাে নিম্নরূপঃ
১. মাইয়্যেত মুসলমান হওয়া, অমুসলমানের জানাযা পড়া জায়েয নেই।
২. মাইয়্যেতের শরীর ও কাপড় পবিত্র হওয়া। মাইয়্যেতকে যে স্থানে রাখবে, সে স্থান পবিত্র হওয়া।
৩. সতর ঢাকা (কাফন পরিহিত হতে হবে)।
৪. মাইয়্যেত খাটে বা মাটিতে থাকা। কারণ গাড়িতে অথবা মানুষের কাধে থাকলে জানাযা সহীহ হবে না।
৫. মাইয়্যেত সামনে থাকা (অনুপস্থিত থাকলে জানাযা সহীহ হবে না)।
৮. জানাযার ইমামতি:
জানাযা নামাযের ইমাম হওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছেন বাদশাহ। তারপরে মৃত ব্যক্তির ওলীর (অভিবাবকদের) মর্যাদা। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যে যত নিকটবর্তী, সে ইমামতি করার জন্য অধিকতর যােগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে ওলীর ইজাযতে যে কোন ব্যক্তি ইমামতি করতে পারবে। ওলী ছাড়া অন্য কেউ জানাযা পড়ালে তার জন্য দ্বিতীয়বার নামায পড়ার ইজাযত আছে। কেননা ওলী সবচেয়ে বেশী হকদার আর ওলী জানাযা পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়া যাবে না। আর জানাযা না পড়ে মাইয়্যেতকে কবরস্থ করা হলে তিনদিন পর্যন্ত কবরের উপর জানাযা পড়া যাবে। তিনদিনের পর জানাযা পড়া যাবে না। -কুদূরী
৯. জানাযা ও অন্যান্য নামাযের মধ্যে পার্থক্য:
জানাযার নামায ও অন্যান্য নামাযের মাসয়ালার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন: জানাযার নামায না পাওয়ার আশংকা থাকলে ওলী ও বাদশাহ ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে পানি থাকা সত্ত্বেও তাড়াতাড়ির জন্য তায়াম্মুম করে জানাযায় শরীক হওয়া যায়েয। -মিফতাহুল জান্নাত
১০. জানাযা নামাজের স্থান ও কাতার:
সাধারণত এ নামায মসজিদের আঙ্গিনায়ই আদায় করা হয়। তবে জামাআত হয় এমন মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য ওজরে মসজিদে পড়া যাবে। যেমন: ঝড় বা বৃষ্টির দরুন মাঠে নামায পড়া সম্ভব না হলে। এ ক্ষেত্রে মাইয়্যেতকে মসজিদের বাইরে রাখতে হবে।
জানাযা নামাযের জন্য তিন কাতার হওয়া সুন্নত। এমন কি নামাযে যদি শুধু সাতজনও অংশ গ্রহণ করে, তবুও একজন ইমাম, বাকী ছয় জনের তিনজন প্রথম কাতারে দাঁড়াবে, দু’জন দ্বিতীয় কাতারে ও একজন তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে। -বেহেস্তী জেওর
লােক বেশি হলে কাতার বেশি হবে কিন্তু কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। নামায বিনা ওজরে বসে বসে পড়া যাবে না, বরং তা দাঁড়িয়েইপড়তে হবে।
১১. জানাযা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি:
ইমাম সাহেব মাইয়্যেতকে কিবলামুখী করে সামনে রেখে তার সীনা বরাবর দাঁড়াবেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরাও বেজোড় কাতারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। তারপর নিয়্যত করবে অর্থাৎ মনে মনে এ সংকল্প করবে যে, আমার সামনে রাখা মাইয়্যেতের জানাযার নামায আদায় করছি। উল্লেখ্য যে, নিয়্যত আরবীত , বাংলায় বা অন্য যে কোন ভাষায় হতে পারে; আরবীতে হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
নিয়তের বাংলা উচ্চারন: "নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।"
এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
নিয়্যত করে ইমাম উচ্চস্বরে ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা আস্তে আস্তে আল্লাহু আকবার বলে যথানিয়মে হাত বাঁধবে, এরপর নিম্নলিখিত দু’আ পাঠ করবে-
سبحانك اللهم وبحمدك و تبارك اسمك و تعالی جك و جل ثنائك ولا اله غيرك -
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় তাকবীর বলবে এবং নামাযে যে দরূদ পড়া হয়, তা পড়বে। তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় তাকবীর বলবে। তৃতীয় তাকবীর বলে মাইয়্যেত পুরুষ বা মহিলা বালিগা হলে নিমােক্ত দু’আ পড়বে-
لَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا ارْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।"
মাইয়্যেত নাবালেগা মেয়ে হলে পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة
উচ্চারন:
"আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।"
মাইয়্যেত নাবালেগ ছেলে হলে পড়বে-
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন:
"আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।"
উপরিউক্তি দু’আ শেষে হাত না উঠিয়ে চতুর্থ তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলবে। তারপর–
السلام عليكم و رحمة الله
বলে প্রথমে ডানে এবং পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম তাকবীর ছাড়া বাকী কোন তাকবীরে হাত উঠাবে না।
১২. লাশ বহনের তরীকা:
মাইয়্যেতকে চারজন পুরুষ লােকে বহন করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া সুন্নত। তবে মাইয়্যেত ছােট হলে কম লােকে বহন করলেও চলবে। লাশ বহনের সময় দৌড়াবে না; বরং স্বাভাবিক গতিতে চলবে, যাতে লাশ পড়ে না যায়। লাশের সামনে না চলে পিছনে চলা মুস্তাহাব। লাশ কবরস্থানে পৌছার পূর্বে মাটিতে বসা মাকরূহ। রাসূল (সা.) মাইয়্যেত কবরস্থানে পৌছার পূর্বে মাটিতে বসতে নিষেধ করেছেন।
১৩. কবর:
কবর দু'ধরনের হতে পারে, বগলী কবর ও সিন্দুক কবর। প্রথমে সােজাসুজি উত্তর-দক্ষিণে মাইয়্যেতের পরিমাপের কিছু বেশি লম্বা আর পাশে তার অর্ধেক এবং আড়াই হাত-তিন হাত পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি কবর খনন করতে হবে (কারাে কারাে মতে পুরুষের জন্য নাভী পরিমাণ এবং স্ত্রী লােকের জন্য বুক পরিমাণ গভীর করতে হবে)।
তারপর কবরের পশ্চিমদিকের দেয়ালের ভিতরে নীচে ছােট একটি গর্ত করবে (মাইয়্যেত রাখার জন্য) এ পদ্ধতিকে বগলী কবর বলে। আর কবরের মাঝখানে মাইয়্যেত রাখার জন্য যে ছোট গর্ত করা হয় তাকে সিন্দুক কবর বলে।
মাটি নরম না থাকলে বগলী কবর দেয়া উত্তম।
মাইয়্যেতকে কবরের পশ্চিম পাশে রেখে তিন-চারজন লােক কবরে নামতে হবে। স্ত্রীলােকগণের বেলায় পর্দা রক্ষা করে নামাতে হবে। তাদেরকে মুহরিম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয়) পুরুষরা ধরে নামাবে, তা না থাকলে বৃদ্ধ পরহেযগার আর তা না থাকলে যুবক পরহেযগার লােক নামাবে, মাইয়্যেতকে কবরে নামিয়ে কিবলামুখী করে শুইয়ে কাফনের বাঁধন থাকলে তা খুলে দিবে। কবরে শােয়ানাের সময় এ দু'আ পাঠ করবে-
بسم الله و على ملة رسول الله-
কবরে শােয়ানাের পর বাঁশের চালি বিছিয়ে মাটি দেয়া শুরু করবে, মাটি দেয়ার সময় এ দু'আ পাঠ করবে-
منها خلقنكم وفيها نعيدكم و منها نخرجكم تارة أخرى-
তবে কোন কোন কিতাবে এ দু’আকে তিন ভাগ করে তিন মুষ্টি মাটি দেয়ার সময় পাঠ করার কথা উল্লেখ আছে।
প্রথমে মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
منها خلقنكم
দ্বিতীয় মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
وفيها نعيدكم
এবং তৃতীয় মুষ্টি দেয়ার সময় বলবে-
و منها نخرجكم تارة أخرى
অতঃপর ভাল করে মাটি বিছিয়ে দেবে। কবরের মধ্যেখানে উটের পিঠের মত অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু করে দিবে। উল্লেখ্য যে, কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া ও কোন কাঁচা গাছের ডাল পুঁতে দেয়া মুস্তাহাব।
মাইয়্যেতকে কবরে রেখে একটু দেরী করে তার জন্য দু'আ করা মুস্তাহাব। রাসূল (সা.) এ ব্যাপারে বলেছেন-
অর্থাৎ- “তােমাদের মৃত ব্যক্তিদিগকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে তালকীন দিবে” -মুসলিম।
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম, দু'আ-দরূদের অনুষ্ঠান করা অবশ্যই জীবিতদের পবিত্র দায়িত্ব। তবে তা যে তিনদিনের দিন অথবা চল্লিশ দিনের দিন হতে হবে এ ধরনের কোন হুকুম মেনে না করেন। কেননা, এ ধরনের কোন হুকুম শরীয়তে নেই। এ অনুষ্ঠান যে কোন সময় করা যেতে পারে। গরীব-মিসকীনদের খানা খাওয়ালে অবশ্যই মৃত ব্যক্তি সওয়াব পাবে, তাই যাদের সঙ্গতি (সামর্থ) আছে তাদের এ ধরনের ব্যবস্থা করা উচিত।
তথ্যসূত্র:
১. ইসলামিয়াত - চতুর্থ সংস্করণ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)
২. আল আকায়েদ ওয়াল ফিকহ্ - নবম/দশম শ্রেণি (বোর্ড বই)
৩. নির্ভরযোগ্য ইসলামিক বই সমূহ
মাশাআল্লাহ।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।
তথ্যবহুল লেখনী।
ধন্যবাদ
DeletePost a Comment